বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম::
প্রিয় নবী এবং সকল নবীদের সর্দার, রহমাতুল্লিল আলামীন, হযরত মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যমে আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল এবং সূচনা হয়েছিল নতুন এক পৃথিবীর।
মহনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মহান সত্তা সম্পর্কে আল্লামা শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন :
‘মানবতার শীর্ষে তুমি হলে উপনীত,
রূপের ছটায় দূর করলে আঁধার ছিল যত-
সকল গুণের সমাবেশে চরিত্রে মহান,
তুমি ও তোমার বংশ পরে হাজারো সালাম।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘আমিতো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)।
আজকের এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) তাইতো তাঁর রচিত ‘মা সাবাতা মিনাসসুন্নাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কাদর, ফজিলতের রাত্রি শবে বরাত, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত এ সবই রাহমাতুল্লিল আলামীনকে দান করা হয়েছে। যাঁকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, স্বয়ং তাঁর আগমন দিবস যে কত লক্ষ-কোটি দিবস-রজনীর চেয়ে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।’
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ।
তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই, জীবনের জটিলতর সমস্যার সমাধানে কুরআনের মুখাপেক্ষী হওয়ার। কেননা আমাদের সব ধরণের বিরোধে ও সিদ্ধান্তহীনতায় আল্লাহর কিতাব থেকেই আমরা একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত পেতে পারি।
রাসূল (সা.) ছিলেন বিনয়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পরিবার, সমাজ ও অন্যান্য সকলের সাথেই তার আচরণ ছিল বিনয়পূর্ণ। রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে এটি আমাদের উত্তমতর শিক্ষনীয় বিষয়।
পরিশেষে বলাযায়, শিশুকে সঠিক জ্ঞান দান না করলে সারা জীবন কাঁদবে আর ধর্মীয় শিক্ষা না দিলে জীবন শুধু নয় কেয়ামত পর্যন্ত কাঁদতে হবে। সুতরাং রাসূল এর জীবন মোতাবেক আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারলেই ইহকালিন কল্যাণ ও পরোকালিন মুক্তি দুটোই সম্ভব। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নগণ্য গোলাম হিসেবে কবুল করুক, আমিন।
লেখক :: মো.আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম :: কলামিস্ট, আইনজীবী ও জিও পলিটিক্স বিশ্লেষক।